
সুষম খাদ্য গ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য পরিবারের খাদ্য বৈচিত্রে ‘খাদ্য বৈচিত্র্য স্কোর’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি পরিবারের সদস্যদের খাদ্য থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি উপাদানের পর্যাপ্ততাকে নির্দেশ করে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা অনুযায়ী, গৃহস্থালির খাদ্য বৈচিত্র্য স্কোর পরিমাপের জন্য সকল প্রকার খাদ্যদ্রব্যকে ১২টি শ্রেণীতে ভাগ করেছে, এগুলো হলোঃ শস্য, কান্ড ও মূল, শাক্সবজি, ফল, সামুদ্রিক খাবার, ডিম, মাছ/মাংস, ডাল ও বীজ, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার, তেল ও চর্বি, মসল্লা এবং মিষ্টি। প্রতিটি শ্রেণী থেকে কমপক্ষে ৩০ গ্রাম গ্রহণ করলে ১ স্কোর ধরা হয়। এভাবে প্রতিদিন প্রতিটি শ্রেণী থেকে গৃহীত খাদ্যের স্কোরের যোগফল ৫ এর কম হলে স্কোর নিম্নমাপ, ৬-৮ হলে স্কোর মাঝারি ধরণের এবং ৯ এর বেশী হলে স্কোর উত্তম বিবেচনা করা হয়।
প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নিজের শরীরের সুস্থতার দিক বিবেচনা করে খাদ্য বৈচিত্র্য স্কোর মেনে চলা উত্তম। আসুন জেনে নেই খাদ্য নির্বাচনের কয়েকটি দিক:
ক্যালরি: ডায়াবেটিক এবং নন-ডায়াবেটিক উভয়ের ক্যালরি চাহিদা সমান হবে (তার বয়স, উচ্চতা, ওজন ও পরিশ্রম ভেদে)।
প্রোটিন: উভয়ের প্রোটিনের চাহিদা (আর.ডি.এ) ১.০ গ্রাম/কেজি শরীরের ওজন। তবে ডায়াবেটিস রোগীর যদি কিডনীর অসুখ থাকে, তবে সেক্ষেত্রে প্রোটিনের পরিমাপ ধার্য্য করতে হবে ০.৬ গ্রাম/কেজি (শরীরের ওজন অনুযায়ী)।
তবে এই প্রোটিন উচ্চ জৈব মাপ (High Biological Value) থেকে নেয়াই শ্রেয়। যেমন: ডিম, ডিমের NPU-100 (NPU=Net Protein Utilization) তবে এই পরিমাপ যাদের ডায়াবেটিস নেই কিন্তু কিডনী রোগ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ইনসুলিন নির্ভরশীল ডায়াবেটিক শিশুদের জন্য ১-১.৫ গ্রাম প্রোটিন ধার্য্য করা হয়েছে।
চর্বি: ডায়াবেটিক ব্যক্তি প্রতিদিন ২০ গ্রাম দৃশ্যমান চর্বি গ্রহণ করতে পারে। ব্যক্তি ভেদে মোট ক্যালরির ১৬-২৫% চর্বি গ্রহণ ধার্য্য করা হয়।
খাদ্য নির্দেশীকাঃ
১। চাহিদা অনুযায়ী খেতে বাধা নেই- সবজি, সবুজ পাতা জাতীয় শাক, মসল্লা, উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার।
২। সীমিত গ্রহণ করতে হবে- চর্বি, বাদাম, শষ্য, মূল, কান্ড, তাল, ফল, দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার, মাংস ও ডিম।
৩। পরিহার করতে হবে- চিনি, মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার, মধু, জ্যাম ও জেলী , মিষ্টি কেক- পেষ্ট্রি, মিষ্টি জুস ও কোমল পানীয়
চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার:
মানুষের রক্তে চিনির/গ্লুকোজ পরিমান স্বাভাবিকের চাইতে বেশি পাওয়াকেই সাধারনত ডায়াবেটিস বলে। এব মূল উপাদান হচ্ছে সাধারনত চিনি ও মিষ্টি জাতীয় সকল ধরণের খাদ্য। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপ হবে- চিনি ও সকল ধরণের মিষ্টি জাতীয় খাবার সম্পর্কে সচেতন হওয়া, নিয়ন্ত্রণ করা অথবা পরিহার করা।
এটিকে বাদ দিয়ে সকল ধরণের পদক্ষেপ/চিকিৎসা ডায়াবেটিক রোগীর রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে সুফল বয়ে আনবে না। যেমনঃ একজন শিক্ষার্থীর প্রধান কাজ হলো পড়াশুনা করা, এই প্রধান কাজটি বাদ দিলে শিক্ষার্থীর সমস্ত পদক্ষেপ পণ্ড হবে। একটু ভেবে দেখুন তো কোন একটি গাছ, মাংস বা সবজি রান্নায় যদি লবনের পরিমাপ বেশী হয় তবে কি আমরা সেই খাবারটিকে জেনে শুনে আরও অধিক পরিমাপে লবন যুক্ত করবো?
তবে কেন রক্তে চিনির পরিমাপ বৃদ্ধি পেয়েছে জেনেও আমরা সচেতন হবো না, চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রণ করবো না?
আসুন জেনে নেই রক্তে চিনির পরিমান বৃদ্ধি করেনা এমন কয়েকটি খাবার সম্পর্কে। খাবারগুলো হলো – মিক্সড খিচুরী, তেলের পরোটা, লুচি, ডালপুরি, ছোলার স্লাইস, ডাল/ডালের বড়া, ডিম, মাছ, মাংস, পনির, মাখন, সবুজ শাক-সবজি, সবুজ ফল, মিষ্টি আলু, বাদাম, টক দই, আপেল, মেথি, কালোজাম, করলা এবং ভেজিটেবল ওয়েল।
পুনশ্চ: ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য লেখাটি প্রাথমিক ও সাধারণ পরামর্শ হিসাবে বিবেচিত হবে। একটি চূড়ান্ত পরামর্শ নয়। আপনার শারীরিক অবস্থার উপর বিবেচনা করে প্রয়োজনে আপনার নিকটস্থ একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
এস.এন. শম্পা
প্রিন্সিপাল নিউট্রিশনিষ্ট এন্ড হেড
শমরিতা হাসপাতাল লিঃ